৫. বোরের পরমানু মডেল :

পরমাণুর গঠন ও একইসাথে পারমাণবিক বর্ণালি ব্যাখ্যার জন্য নীলস বোর ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তার বিখ্যাত পরমানু মডেল প্রকাশ করেন। বোর পরমাণু মডেলের স্বীকার্যগুলো নিম্নরূপ :
(১) ইলেকট্রনের স্থির কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের ধারণা সম্পর্কীয় স্বীকার্য
(২) ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ সম্পর্কীয় স্বীকার্য
(৩) শক্তির শোষণ বা বিকিরণ এবং বর্ণালি সৃষ্টি সম্পর্কীয় স্বীকার্য
প্রথম স্বীকার্য (ইলেকট্রনের স্থির কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের ধারণা সম্পর্কীয়) :
পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বাইরে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে কতিপয় নির্দিষ্ট শক্তির বৃত্তাকার কক্ষপথ আছে। এই কক্ষপথে ইলেকট্রনগুলো সর্বদাই নিউক্লিয়াসের চারদিকে আবর্তন করে । কক্ষপথগুলো নিউক্লিয়াস থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত। ইলেকট্রনগুলো এসব বৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তনকালে যতক্ষন তারা একই কক্ষপথে থাকবে ততক্ষন তারা কোন শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করবে না। এই কক্ষপথগুলো স্থির কক্ষপথ বা শক্তিস্তর নামে পরিচিত।

bohr model

দ্বিতীয় স্বীকার্য (ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ সম্পর্কীয়) :
স্থির কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ h/2π এর অখন্ড বা পূর্ণ সংখ্যার গুণিতক হয়। অর্থাৎ
ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ, mvr = nh/2π
যেখানে m = ইলেকট্রনের ভর
v = ইলেকট্রনের রৈখিক বেগ
r = কক্ষপথের ব্যাসার্ধ
n = অখন্ড সংখ্যা = 1,2,3 ,…………
h = Plunk constant = 6.626 x 10-34 তৃতীয় স্বীকার্য (শক্তির শোষণ বা বিকিরণ এবং বর্ণালি সৃষ্টি সম্পকীয়) :
যখন কোন ইলেকট্রন একটি কক্ষপথ বা শক্তি স্তর হতে অন্য কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে লাফ দেয় তখন ইলেকট্রন দ্বারা নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি শোষিত বা বিকিরিত হয়। ইলেকট্রন যদি নিম্ন শক্তি স্তর থেকে উচ্চতর শক্তি স্তরে লাফ দেয় বা উন্নীত হয় তখন ইলেকট্রন দ্বারা শক্তি শোষিত হয়। আবার যখন ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে লাফ দেয় বা নেমে আসে তখন ইলেকট্রন শক্তি বিকিরণ করে।
যদি নিম্নতর ও উচ্চতর শক্তি স্তরের শক্তি যথাক্রমে E1 ও E2 হয় তবে ইলেকট্রন দ্বারা বিকিরিত বা শোষিত শক্তি ∆E = E2-E1 ——– (১) , প্লাংকের সূত্রানুযায়ী, ∆E = hυ , যেখানে= প্লাংকের ধ্রুবক এবং υ = কম্পাংক

Leave a comment

২. রাদারফোর্ডের পরমানু মডেল :

১৯১১ সালে রাদারফোর্ড তাঁর বিখ্যাত α কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা দ্বারা পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কারের মাধ্যমেই একটি পরমাণুর নিউক্লিয় মডেল প্রস্তাব করেন। মডেলটি নিম্নরূপ :
(১) পরমাণুর যে অংশটি ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট ও ভারী তা কেন্দ্রে অবস্থান করে। এটি নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত। নিউক্লিয়াসেই একটি পরমানুর প্রায় সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত থাকে।
(২) পরমাণু সামগ্রিকভাবে তড়িৎ-নিরপেক্ষ। নিউক্লিয়াসে যতগুলো ধনাত্মক কণা (প্রোটন) বিদ্যমান, ঠিক ততগুলো ঋনাত্মক কণা (ইলেকট্রন) এর চারপাশে অবস্থান করে।

(৩) পরমাণুর এই মডেল সৌরজগতের সাথে তুলনীয়। সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে গ্রহগুলো যেভাবে ঘুরে, ঠিক একইভাবে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে তীব্র বেগে ঘুরছে। ফলে নিউক্লিয়াস এবং ইলেকট্রনের মধ্যকার কেন্দ্রমুখী বল এবং ইলেকট্রনের কেন্দ্রবহির্মুখী বল পরস্পর সমান ও বিপরীতমুখী হয়। তাই পরমানু সুস্থিত হয়।
(৪) পরমানুর আকার বা আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াস অত্যন্ত ক্ষুদ্র।

৩. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সফলতা :

(১) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল যথেষ্ট সফলভাবে α কণিকা পরীক্ষাকে ব্যাখ্যা করে।
(২) পরমানুতে নিউক্লিয়াসের উপস্থিতির সঠিক ধারণা দেয়।
(৩) পরমানুর চার্জ নিরপেক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত ব্যাখ্যা দেয়।

৪. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি :

এ মডেলের ত্রুটিগুলো নিম্নরূপ – (১) এ মডেলকে সোলার সিস্টেমের (Solar system) সাথে তুলনা করা হয়েছে। সৌরমন্ডলের গ্রহগুলো তড়িৎ নিরপেক্ষ, কিন্তু পরমানুতে ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন ও ঋনাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন বিদ্যমান এবং এদের মধ্যে আকর্ষণ ও বিকর্ষন আছে। (২) ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ-চুম্বকীয় তত্ত¡ অনুসারে কোন আধানযুক্ত কণা যখন বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করে তখন অনবরত শক্তি বিকিরণ করে। নিরবচ্ছিন্নভাবে শক্তি হ্রাসের ফলে এরূপে ভ্রমণরত ইলেকট্রনের গতিশক্তি কমে যাবে এবং তার সর্পিলাকারের ঘূর্ণন পথের ব্যাসার্ধ কমতে কমতে এক সময়ে তা নিউক্লিয়াসে পতিত হবে। ফলে এ মডেলের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ-চুম্বকীয় তত্ত ত্রুটি

Leave a comment

১. রাদারফোর্ডের আলফা কনা বিচ্ছুরন পরীক্ষা ও নিউক্লিয়াস আবিষ্কার :

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড তৈজস্ক্রিয় উৎস হতে বিকিরিত দ্রুতগামী α কণিকাকে একটি অতি পাতলা স্বর্ণ পাতের উপর বিক্ষেপন করে লক্ষ করেন যে- (১) অধিকাংশ α কণিকা স্বর্ণপাত ভেদ করে চলে যায়।
(২) অল্প সংখ্যক α কণিকা বিকর্ষিত হয়ে বেকে দিক পরিবর্তন করে।
(৩) অত্যন্ত অল্প সংখ্যক α কণিকা (প্রায় ২০,০০০ ভাগের ১ ভাগ) পুরোপুরি বেকে ফিরে আসে।

পর্যবেক্ষণ : তিনি লক্ষ করেন যে,
(১) পরমাণুর অভ্যন্তরে অধিকাংশ স্থান ফাঁকা।
(২) α কণিকা যে অঞ্চল হতে বেঁকে দিক পরিবর্তন করে তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ধনাত্মক আধান যুক্ত বস্তু বিদ্যমান। রাদারফোর্ড এ ধনাত্মক বস্তুর নাম দেন নিউক্লিয়াস। তিনি আরও বলেন, নিউক্লিয়াসে বস্তুর সমস্ত ভর পুঞ্জিভূত থাকে।
(৩) পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং যা হাইড্রোজেন পরমানুর আয়তনের তুলনায় প্রায় ১ লক্ষ ভাগ ছোট।

Leave a comment

Hello world!

Welcome to WordPress. This is your first post. Edit or delete it, then start writing!

1 thought on “Hello world!”

Leave a comment